ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার মাঝে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটি থেকে কিছু বিমান এবং নৌসেনার জাহাজ সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের দুই কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন ইসরায়েলের ছয়দিনের বিমান হামলার ফলে ইরানের রাজধানী তেহরানে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং হাজার হাজার বাসিন্দা শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। ইসরায়েলের হামলাকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন কতটা সরাসরি জড়িত হবে, তা নিয়ে বিশ্ব এখনও অনিশ্চয়তায় রয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখনও দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং হোয়াইট হাউসের সিনিয়র নীতিনির্ধারকরা ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের নানা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু সামরিক পরিকল্পনার ইঙ্গিত মিলেছে আগামী সপ্তাহান্তে সম্ভাব্য হামলার দিকেও।
ট্রাম্পের অবস্থান অস্পষ্ট
হোয়াইট হাউসের বাইরে বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের অভিযানে অংশ নেবে কিনা— এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমি সেটা করতেও পারি, আবার নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি আসলে কী করব।”
এ ধরনের মন্তব্য ও অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মহল।
কাতারে সামরিক তৎপরতা ও সতর্কতা
ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে কাতারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বৃহস্পতিবার তাদের কর্মীদের জন্য নিরাপত্তাবিধি জারি করেছে। দূতাবাস জানিয়েছে, দোহার বাইরে অবস্থিত মার্কিন সামরিক বাহিনীর বৃহত্তম ঘাঁটি আল-উদেইদ এয়ার বেসে প্রবেশ সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের প্রতি "আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন" করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সূত্রে জানা গেছে, যেসব যুদ্ধবিমান শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্রে ছিল না, সেগুলিকে আল-উদেইদ ঘাঁটি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে বাহরাইনের ৫ম নৌবহরের ঘাঁটি থেকেও কিছু যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এ ধরনের পদক্ষেপ অস্বাভাবিক নয়। আমাদের বাহিনীর সুরক্ষাই আমাদের প্রাধান্য।”
সামরিক পুনর্বিন্যাস ও প্রস্তুতি
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপ থেকে বেশ কিছু ট্যাঙ্কার বিমান এবং অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থানরত একটি বিমানবাহী রণতরীকেও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উত্তেজনার মূল উৎস: ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি
ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে—এই তথ্যেই তারা বিমান হামলা শুরু করেছে। যদিও ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তারা বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
ইরানের হুঁশিয়ারি
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত জেনেভায় এক বিবৃতিতে জানান, তেহরান ওয়াশিংটনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে জড়িয়ে পড়ে, তবে ইরানও শক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে।
বিশ্লেষণকারীদের মতে, এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে একটি পূর্ণমাত্রার অঞ্চলে সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে মাত্র একটি ভুল পদক্ষেপ বহু দেশের জন্য বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলী সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি কূটনৈতিক কার্যক্রমও নজরকাড়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Tags
আন্তর্জাতিক
